"ফের দেখা হবে"


ফেসবুকে হঠাৎ পুরাতন একটি পোস্টে একজন রিয়্যাক্ট(ইমোজি) দেয়ায় তা সামনে ভেসে আসে। পোস্টটি ছিলো প্রাণের হাইস্কুল ক্যম্পাসে এসেম্বলিতে দাঁড়িয়ে থাকার ছবি সম্বলিত স্মৃতি বিজড়িত একটি ছবি। লাস্ট কমেন্টটি ওপেন করলাম, কিছু কমেন্টের রিপ্লাই না দিলেও হাসির কথাগুলোতে হাহা(ইমোজি) রিঅ্যাকশান মিসিং ছিলো।
দিলাম পূরণ করে। 😃
আর, কমেন্ট চেক করলাম, সাথে চিন্তা করলাম দেয়ার মত কারো কমেন্টের রিপ্লায় দেয়া না থাকলে দেয়া যায় কিনা। না হলেও কোন একটায় দিবো! যেন আরো বেশি করে অন্য বন্ধুদের ওয়ালে সেই পোস্টটি ভাসে।
নস্টালজিক ফিলিংসটা তারাও নিক। আমিই বা কেন একা ভোগ করবো?
তারাও তো হক্কানী এই পোস্টের স্বাদ নেয়ার ব্যাপারে।
আহা, কি না দিন ছিলো!

কতই না সুখ ছিলো জীবনে। আহা!
দুনিয়াবি কিছু বুঝতাম না।
৯:৩০ টু ৪ টা স্কুলের সেই দিনগুলি। সেই রুটিন হয়তো আজো আমাদের আছে, ভার্সিটির রুটিন! তবে হাইস্কুল রুটিনে মাঝে টিফিন ছাড়া কোন গ্যাপ ছিলো না।
এখন টিফেনে গ্যাপ, ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে গ্যাপ, উপরে গ্যাপ, নিচে গ্যাপ। সবকিছুতেই গ্যাপ। বন্ধুত্বের গ্যাপ।
এই গ্যাপটা কি পূরণ হবে কোনদিন?
আজ দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে সবাই বাড়িতে,  দীর্ঘদিন একসাথে সময় কাটানো বন্ধুদের খুব মিস করাটা স্বাভাবিক। 
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে আমি যেমন অন্য বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে পারছি না,  ঠিক তেমনি অনেকেই পারছে না।

ভয়াবহ করোনা!!
এক হতে পারি না।
সামাজিক দূরত্বের বাধায় বন্ধু-বান্ধব,  আত্মীয় স্বজনের সাথে দূরত্ব!
কেন এই দূরত্ব?
তোদের বড্ড মিস করছি বন্ধু।
শুধু হাই-স্কুলের না। হাই-স্কুলের বন্ধুদের কথা মনে পড়ার সাথে প্রাইমারি ও ভার্সিটির বন্ধুদের কথা মনে পড়ে গেল।
এই করোনায় বাইরে ঘুরাঘুরি করোনা!
নিজ জেলার বন্ধুর চেয়ে অন্যান্য জেলার বন্ধু-বান্ধব বড়ভাই-আপু, ছোট ভাই-আপুদের জন্য বেশি টেনশন হচ্ছে এই মূহুর্তে!
হাহা কমেন্ট দিবো ভেবে এসেছিলাম।
মনের অজান্তেই চোখের কোনে জ্বল চলে আসলো।
ক্যাম্পাস ছেড়েছি ১৮ তারিখ।
অনেক দিন প্রিয় ক্যাম্পাস, ক্যাম্পাসের প্রকৃতি, প্রিয় ক্লাসরুম, প্রিয় হল, ইত্যাদি ইত্যাদি....।
সব মিস করছি এই মূহুর্তে।
শুরুতে সবাই বাড়ি গিয়ে বন্ধু/বড়-ছোট ভাই বোনদের ছবি দিয়ে মেনশন করে কিছু লিখে মেসেঞ্জারে দিল, এখনো চলছে., আন-অ্যানিমাস ম্যাসেজ আদান প্রদান ও মেসেঞ্জার ডে স্টোরিতে তার প্রদর্শন শুরু করলো, ফেসবুকের বিদৌলতে বন্ধুদের থেকে ইচ্ছে করে পঁচানী খেতে উদ্ভট পোজের ছবি দিয়ে টার্গেট ছুড়ে দেয়া যে এত এত হলে এই পোজ দিব!,
আরো কত কি।
এসব হয়ত বন্ধুত্বপূর্ণ ভালোবাসা, আবেগ, অনুভুতি।
ক্যাম্পাস ছাড়ার আগে অনেকে বড় ভাইদের বিদায় দিতে বাস কাউন্টার পর্যন্ত যায়। বাস ছেড়ে না যাওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকে। আমিও করেছি এরকম।
কারণ ক্যাম্পাসের প্রিয় জিনিসগুলোর মধ্যে মনের মত একখান,  দুইখান, তিনখান বা এর বেশি যা- তা হলো বড়ভাই।
আর যখন এই ভাইয়ের পড়াশোনা শেষ, অনার্স শেষ,  তখন একবার ভাইয়ের চলে যাওয়ার গুঞ্জন ওঠে!
হায় আল্লাহ, ভাই চলে যাবে?
 না গেলে হলো একপ্রকার শান্তি।
কিন্তু এখানেই কি শেষ?
না।
ভাই টেনশনে থাকে।
এই আছে নাই!
এই যদি হয় অবস্থা কেমনটা লাগে! 😐
দিন ফুরিয়ে যায়, একে একে বড় ভাইগুলো চলে যায়।
বাসস্টপে বিদায় দেয়ার সময় চলে আসে। আরো একবছর থাকার গ্যারান্টি আর থাকে না।
বাসস্টপে বিদায় দেয়ার সময় বুকে কেমন যেন চিন চিন করে।
কেমন একটা অনুভুতি হয় তা লিখে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। যারা পরিক্ষিত তারা মনে করুন তো একবার।
মনে পড়েছে?
হায়!
এবার যখন ক্যাম্পাস ছাড়ি তখন হুটহাট কে কখ কোথায় গেল কারো সেরকম খোঁজ নাই।
ক্যম্পাস বন্ধ!
হল বন্ধ!
বাড়ি যাওয়া লাগবে!
অন্যান্য ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার আগে তাও দেখা সাক্ষাত হয়। ফিরে এসে দেখা হবার জন্য "ইনশাআল্লাহ" বলে।
এবার সেটা সীমিত পরিসরে হয়েছে।
আসলে আল্লাহ যদি চায় মানে ইনশাআল্লাহ আবার সবার সাথে দেখা হবে। পৃথিবী সুস্থ হবে ইনশাআল্লাহ সবার সাথে আবার দেখা হবে, আড্ডা হবে।
বড় ভাই বিদায়ের বেদনার ন্যায় এই দূরত্ব থাকবে না ইনশাআল্লাহ।
তাই,
পরিবারের সবার খেয়াল রাখুন/রাখো/রাখ ভাই-বোন/বন্ধুরা।
নিচে সচেতন থেকে পাড়াপ্রতিবেশিদের খেয়াল রাখাটাও ভার্সিটি পড়ুয়া শিক্ষার্থী হিসেবে বাংলাদেশের শিক্ষিত শ্রেনির একজন হিসেবে করা উচিত।
আল্লাহ আমাদের সবার মঙ্গল করুন!
আমিন।
(লিখতে চেয়েছিলাম কী, আর কী লিখে দিলাম! সিরিয়াসলি মাঝখানে লিখার সময় চোখের কোনে জ্বল এসেছিল)
-ভালো থাকিস তোরা বন্ধু।
-ফের দেখা হবে ইনশাআল্লাহ।

0 Comments